কীভাবে গবেষণা করব ?? গবেষণার চর্চা শুরু করার জন্য আপনাকে কিছু ধাপে কাজ করতে হবে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করা তনিমা ইসলামের অভিজ্ঞতার আলোকে গবেষণার চর্চার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:
কীভাবে গবেষণা করব?
১. আগ্রহের ক্ষেত্র নির্ধারণ করুন।
প্রথমে নিজে থেকে বোঝার চেষ্টা করুন কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি। আপনার অধ্যয়ন, দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করুন।
২. সমস্যার বিশ্লেষণ করুন।
গবেষণার একটি মূল ভিত্তি হলো একটি সুনির্দিষ্ট সমস্যা বা প্রশ্ন চিহ্নিত করা। আপনার আগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলি বোঝার চেষ্টা করুন এবং সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা শুরু করুন।
৩. পড়াশোনা ও তথ্য সংগ্রহ।
গবেষণার জন্য প্রাসঙ্গিক বই, জার্নাল, আর্টিকেল এবং অনলাইন রিসোর্স থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করুন। এ বিষয়গুলো নিয়ে ভালো বোঝাপড়া তৈরি করলে গবেষণার ভিত্তি মজবুত হবে।
৪. মেন্টরের সহায়তা নিন।
আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো সাথে পরামর্শ করুন। তাঁরা আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
1. dxn কি? dxn কেন? কিভাবে আয় করবেন?
3. বিশ্বখ্যাত ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ
4. NSP স্কলারশিপ স্ট্যাটাস ২০২৫!
৫. গবেষণার পদ্ধতি শিখুন।
গবেষণার বিভিন্ন পদ্ধতি, যেমন ডাটা সংগ্রহ, ডাটা বিশ্লেষণ, পরিসংখ্যান ব্যবহার, এবং ফলাফল মূল্যায়ন শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয়ে কোর্স বা ওয়ার্কশপ করতে পারেন।
৬. গবেষণার পরিকল্পনা তৈরি করুন।
গবেষণা শুরু করার আগে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করুন। এতে থাকবে:
– গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
– সময়সূচি
– ব্যবহৃত পদ্ধতি
– প্রয়োজনীয় রিসোর্স
৭. গবেষণায় যুক্ত থাকুন।
নিজের কাজের বিষয়ে আলোচনা করুন, সেমিনার ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করুন এবং অন্য গবেষকদের কাজ সম্পর্কে জানুন। এভাবে আপনি নতুন ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পেতে পারেন।
৮. গবেষণার ফলাফল লিখুন এবং প্রকাশ করুন।
গবেষণার তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ শেষে ফলাফল লিখুন। এটি কোনো জার্নাল বা কনফারেন্সে প্রকাশ করার চেষ্টা করুন।
৯. ধৈর্য ও অধ্যবসায় বজায় রাখুন।
গবেষণা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
অর্জনের জন্য বিভিন্ন সরাসরি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কোর্স করতে পারেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম থেকেও মানসম্মত কোর্স পাওয়া যায়। এখানে কিছু তথ্য দেওয়া হলো যা আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে:
বাংলাদেশে গবেষণাসংক্রান্ত কোর্স:
1. BRAC University (BIGD)
– বিভিন্ন গবেষণামূলক স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স অফার করে।
– গুণগত ও পরিমাণগত গবেষণার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ.
2. ICDDR,B
– পাবলিক হেলথ ও বায়োমেডিকেল গবেষণার প্রশিক্ষণ।
– গবেষণা পদ্ধতি ও ডাটা বিশ্লেষণের কোর্স পরিচালনা করে।
3. Research and Training Wing, Dhaka University
– স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোর্স পরিচালনা করে।
4. *জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো*
– উদাহরণ: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (BIDS)।
আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স:
1. Coursera
– হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাসংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্স।
– কোর্স উদাহরণ: Research Methods, Data Analysis for Social Science, ইত্যাদি।
2. edX
– MIT, অক্সফোর্ড, এবং অন্যান্য প্রিমিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণামূলক কোর্স।
– থিসিস লেখা, গবেষণা ডিজাইন, এবং ডাটা সংগ্রহের কোর্স পাওয়া যায়।
3. FutureLearn
– গবেষণা সংক্রান্ত কোর্স ও ডিগ্রি প্রদানকারী ইউরোপীয় প্ল্যাটফর্ম।
– গবেষণার ভিত্তি এবং অ্যাডভান্সড লেভেল কোর্স।
4. LinkedIn Learning
– গবেষণাসংক্রান্ত স্কিল ডেভেলপমেন্টের ছোট কোর্স।
– থিসিস লেখা, রিসার্চ রিপোর্ট তৈরি, এবং স্ট্যাটিস্টিক্যাল সফটওয়্যার শেখা।
5. UNICEF Research Tools
– গবেষণার পদ্ধতি এবং শিশু-সম্পর্কিত বিষয়ে কোর্স।
গবেষণাসংক্রান্ত সফটওয়্যার কোর্স:
SPSS, STATA, R, বা Python নিয়ে কোর্স।
ডাটা এনালাইসিসের উপর বিশেষ কোর্স করা যেতে পারে। এগুলো Coursera, edX এবং YouTube-এ বিনামূল্যেও পাওয়া যায়।
অনলাইন রিসোর্স:
- YouTube Channels: MIT OpenCourseWare, Khan Academy।
- ResearchGate: গবেষণা পেপার এবং একাডেমিক রিসোর্স শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম।
- Google Scholar Tutorials: রিসার্চ রেফারেন্স ও লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট শিখতে।
বিষয়ভিত্তিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান:
আপনার গবেষণার বিষয় অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কোর্স বা ইন্টার্নশিপ করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ:
1. গণস্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য:
– আইসিডিডিআরবি (ICDDR,B)
– সংক্রামক রোগ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি নিয়ে গবেষণামূলক কোর্স।
– ওয়ার্কশপ: Introduction to Epidemiology and Biostatistics”।
2. ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ:
– পাবলিক হেলথের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
– কোর্স: “Health Research Methods”।
3. পি আই রিসার্চ সেন্টার:
– মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যার ওপর গবেষণামূলক প্রশিক্ষণ।
4. বাইনারি ডেটা ল্যাব:
– ডেটা বিশ্লেষণ এবং ডেটা সায়েন্সের ওপর প্রশিক্ষণ।
স্ট্যাটিসটিক্যাল সফটওয়্যার প্রশিক্ষণ:
গবেষণার জন্য কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে পরিসংখ্যান বিষয়ক সফটওয়্যার শেখা প্রয়োজন।
1. SPSS (Statistical Package for the Social Sciences):
– ডেটা বিশ্লেষণের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত।
– কোর্স: আইসিডিডিআরবি বা ইউটিউবে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
2. STATA:
– উন্নত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
– অনলাইন কোর্স: Coursera, edX।
3. R বা Python:
– ডেটা সায়েন্স এবং ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য।
– প্রশিক্ষণ: DataCamp, Kaggle, অথবা YouTube-এ টিউটোরিয়াল।
শর্টকোর্স ও ওয়ার্কশপের সুবিধা:
– কোর্সগুলোতে তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক জ্ঞান একত্রে শেখার সুযোগ থাকে।
– বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন WHO, UNICEF এবং UNDP-এর গবেষণা কোর্স অফার করা হয়।
– AIUB, IUB, এবং DU-এর ডিপার্টমেন্টাল রিসার্চ ওয়ার্কশপে অংশ নিতে পারেন।
গবেষণায় দক্ষতা অর্জন করতে নিয়মিত গবেষণা নিবন্ধ ও প্রকাশনা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা পাঠের মাধ্যমে আপনি শুধু অন্য গবেষকদের কাজ জানতে পারবেন না, পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি, নতুন চিন্তা ও ধারণাও বুঝতে পারবেন। এখানে কিছু উপায় দেওয়া হলো যা গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস এবং আপনার গবেষণার জন্য উপকারী হতে পারে:
কীভাবে গবেষণা করব ?? গবেষণাপত্র পড়ার কিছু উপায়:
1. নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন:
– গবেষণাপত্র পড়া শুরুতে কঠিন বা নীরস মনে হতে পারে, তবে নিয়মিত পড়লে বিষয়গুলি পরিষ্কার হবে।
– সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩টি গবেষণাপত্র পড়ার চেষ্টা করুন।
2. গবেষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি বুঝতে চেষ্টা করুন:
– প্রথমে সারাংশ (Abstract) এবং উপসংহার (Conclusion) পড়ুন।
– গবেষণার লক্ষ্য, পদ্ধতি এবং ফলাফল খুঁজে বের করুন, যাতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
3. বিষয়ভিত্তিক জার্নাল নির্বাচন করুন:
– আপনি যে বিষয়ে গবেষণা করছেন, সে বিষয়ে পছন্দের জার্নাল এবং প্রকাশনা পড়ুন।
– উদাহরণস্বরূপ, যদি পাবলিক হেলথের উপর গবেষণা করেন, তাহলে The Lancet, Journal of Public Health বা American Journal of Public Health পড়তে পারেন।
গবেষণার নতুন আইডিয়া তৈরি করতে সাহায্য করবে:
1. বিভিন্ন নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, এবং বই পড়ুন:
– আপনার আগ্রহের বিষয় নিয়ে নতুন গবেষণার আইডিয়া পেতে প্রচুর বই এবং নিবন্ধ পড়ুন।
– বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার বা পডকাস্ট শুনুন।
2. গবেষণা নেটওয়ার্কে যুক্ত হন:
– বিভিন্ন গবেষক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখুন।
– সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং কনফারেন্সে অংশ নিন, যেখানে নতুন গবেষণা নিয়ে আলোচনা হয়।
3. গবেষণার পর্যালোচনা করার সময় চিন্তা করুন:
– যে গবেষণাপত্র পড়ছেন, তার বিশ্লেষণ করুন এবং বুঝুন কোন জায়গাগুলোতে নতুন কাজ হতে পারে।
কীভাবে গবেষণা করব ~ ওপেন সোর্স ওয়েবসাইট:
ইন্টারনেটে অনেক ওপেন সোর্স ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখান থেকে আপনি গবেষণা নিবন্ধ পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ:
1. Google Scholar (scholar.google.com):
– এটি একটি ফ্রি গবেষণা ডেটাবেস যা বিভিন্ন ধরনের গবেষণাপত্রের লিঙ্ক দেয়।
2. ResearchGate (researchgate.net):
– এখানে আপনি বিভিন্ন গবেষক এবং তাদের কাজের সাথে সংযুক্ত হতে পারেন। অনেক গবেষক তাদের কাজ এখানে শেয়ার করে।
3. PubMed (pubmed.ncbi.nlm.nih.gov):
– বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণাপত্র পাবেন এখানে।
4. arXiv (arxiv.org):
– বিভিন্ন বিজ্ঞান, গাণিতিক এবং প্রযুক্তিগত গবেষণাপত্র ফ্রি এক্সেসে পাওয়া যায়।
5. SSRN (ssrn.com):
– এটি একটি সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্ক, যেখানে সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিষয়ে গবেষণা উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা পর্যালোচনা ও নতুন আইডিয়া তৈরি:
– গবেষণাপত্র পড়ার সময় কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্ন মাথায় রাখুন:
– কি সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে?
– কী নতুন পদ্ধতি বা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে?
– ফলাফল কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে?
– আপনি কোথায় নতুন কাজ করতে পারেন?
গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং সেগুলোকে সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করা আপনার গবেষণা দক্ষতা উন্নত করতে সহায়ক হবে।