আন্দিজ পর্বতমালা বা আন্দেস পর্বতমালা
দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম সীমান্ত,, যেখানে সমগ্র সীমান্ত জুড়ে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে জুড়ে আছে দীর্ঘ ও বৃহৎ আন্দিজ পর্বতমালা । আন্দিজ পর্বতমালা প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়।
প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল এবং এবং দক্ষিণ আমেরিকার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আন্দিজ পর্বতমালায় গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমি। যা এ পর্বতমালাকে করেছে অনন্য এবং সবথেকে অসাধারণ। এ ছাড়াও এই অঞ্চল জুড়ে জীব বৈচিত্র এবং উদ্ভিদ জগতের এক অপূর্ব সমাহার এর দেখা মেলে ।
কোথায় অবস্থিত ?
দক্ষিণ আমেরিকার এ আন্দিজ পর্বতমালা হলো ভূপৃষ্ঠে অবস্থানরত বিশ্বের দীর্ঘতম মহাদেশীয় পর্বতমালা। এটি প্রায় ৭০০০ মিটার দীর্ঘ এবং স্থানভেদে ২০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার প্রস্থ । এর গড় উচ্চতা ৪ হাজার কিলোমিটার। আন্দিজ নামটির উৎপত্তি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অধিকাংশের মতে এটি অ্যান্টি শব্দ হতে আগত। এ মহাদেশীয় পর্বতমালাটি দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।আন্দিজ পর্বতমালা মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত। উওর, মধ্যে এবং দক্ষিণ আন্দিজ। এশিয়া মহাদেশের বাইরে অর্থাৎ হিমালয় পর্বতমালা ছাড়া আন্দিজ পর্বতমালা হল বিশ্বের সবথেকে উঁচু পর্বতমালা। আর এখানে রয়েছে এশিয়ার বাইরে অবস্থিত সর্বোচ্চ পর্বত আকোনকাগুয়া।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৬৯৬১মিটার। পৃথিবীর উচ্চতম আগ্নেয়গিরি গুলো এখানে অবস্থিত। চিলি ও আর্জেন্টিনার সীমান্তে অবস্থিত পৃথিবীর উচ্চতম আগ্নেয়গিরি ওজোস দেল সালাদো। যার উচ্চতা ৬৮৯৩ মিটার । এখানে রয়েছে কিছু সুউচ্চ মালভূমি ।
আন্দিজের আল্টিপ্লানো মালভূমি হলো পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মালভূমি। আন্দিজের পশ্চিমে অবস্থিত আটাকামা মরুভূমি। যা অত্যন্ত শুষ্ক এবং বৃষ্টিহীন কিন্তু শীতল। এটি চিলির উত্তরে অবস্থিত এবং পেরুর দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীর সবথেকে শুষ্কতম স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এর গড় তাপমাত্রা ১৮° সেলসিয়াস এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাএ ১৫ মিলিমিটার।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং দীর্ঘতম নদী আমাজন। যা আন্দিজ পর্বত থেকে উৎপত্তি হয়েছে। তবে আন্দিজ কিন্তু কোন একক পর্বত নয় এটি অনেকগুলো পর্বত মালা নিয়ে গঠিত।
নিচের বিষয়গুলো জানতে ঘুরে আসতে পারেন
►সেনজেন কাকে বলে ? বিস্তারিত জানুন ।
►পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে যে সকল দেশ |
►►আয়ারল্যান্ড দেশ – সকল তথ্য সমূহ
►►ফিজি দেশ
►►আজারবাইজান দেশ -সকল তথ্য সমূহ
সেন্ট্রাল অ্যান্ডিজের ফিজিওগ্রাফি
সেন্ট্রাল অ্যান্ডিজ অক্ষাংশ ৩৫° সেকেন্ডে শুরু হয়, যেখানে কর্ডিলের চরিত্রের তীব্র পরিবর্তন হয়। এর প্রস্থ প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং এটি শুষ্ক এবং উচ্চতর হয়ে ওঠে; পাসগুলিও উচ্চতর এবং অতিক্রম করা আরও কঠিন। হিমবাহগুলি বিরল এবং শুধুমাত্র উচ্চ উচ্চতায় পাওয়া যায়। প্রধান পরিসরটি চিলি এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে সীমানা হিসাবে কাজ করে এবং এছাড়াও প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত নদীর মধ্যে নিষ্কাশন বিভাজন। আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ সিরিজের শেষ, মাউন্ট টুপুঙ্গাটো (২১,৫৫৫ ফুট) চিলির সান্তিয়াগোর ঠিক পূর্বে। টুপুঙ্গাতো এবং শক্তিশালী মাউন্ট অ্যাকনকাগুয়ার মধ্যে উঁচু, তুষার-ঢাকা শৃঙ্গের একটি লাইন। অ্যাকনকাগুয়ার উত্তরে মাউন্ট মার্সেদারিও (২২,২১১ ফুট) অবস্থিত এবং তাদের মধ্যে মাউন্ট এসপিনাসিটো ( ১৬,০০০ ফুট) এবং মাউন্ট প্যাটোস (১২,৮২৫ ফুট) এর উচ্চ গিরিপথ রয়েছে। অ্যাঙ্কনকাগুয়ার দক্ষিণের পাসগুলির মধ্যে রয়েছে পিরকাস (১৬,৯৬০ ফুট), বারমেজো (১০,০০০ ফুটের বেশি), এবং ইগলেসিয়া (১৩,৪০০ ফুট)। আরও উত্তরে গিরিপথগুলো অনেক বেশি কিন্তু বেশি। মাউন্টস বোনেট, ওজোস দেল সালাডো এবং পিসিসের চূড়াগুলি ২০,০০০ ফুট অতিক্রম করেছে।
ধারণা করা হয় প্রায় ৫কোটি বছর আগে এটি গঠিত হয়েছিল। এ পর্বতে রয়েছে আকরিক এবং লবণের বিশাল মজুদ । এখানে রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য হাইড্রোকার্বনের মজুদ। এছাড়া ও রয়েছে তামার মজুদ।
এখানে রয়েছে সোনার বিশাল খনি।পেরুতে আছে ৪র্থ সোনার খনি।পেরুর ইয়ানাকোচা পৃথিবীর অন্যতম সোনার খনি । পুরো পৃথিবীর ৪৫% তামা ও ৩০% রুপা এখানে রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে বিস্তৃত হবার কারণে এর জলবায়ু বিভিন্ন রকমের পরিলক্ষিত হয়। দক্ষিণ আন্দিজের জলবায়ু ঠান্ডা ও বৃষ্টি বহুল। আবার মধ্য আন্দিজের জলবায়ু শুষ্ক। উত্তর আন্দিজের জলবায়ু বৃষ্টিবহুল উষ্ণ। এছাড়াও আন্দিজের দক্ষিণে অর্থাৎ চিলি ও আর্জেন্টিনার সীমানাতে আছে ক্রান্তীয় হিমবাহু অঞ্চল। যা পৃথিবীর প্রায় ৯৫% ক্রান্তীয় হিমবাহের মজুদ। কিন্তু দুঃখের বিষয় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এ হিমবাহের বরফ গলতে শুরু করেছে।
এ পর্বতমালায় গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। এখানে রয়েছে ৩০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ যার অর্ধেক এই অঞ্চলের স্থানীয় । এখানে সিনচোনা পারসেন্স নামে একটা ছোট্ট গাছ পাওয়া যায় যা ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। এ পর্বতমালায় কৃষিকাজ হয়ে আসছে প্রায় ছয় হাজার বছর ধরে। এখানে বর্তমানে টমেটো তামাক, তুলা ও কফি প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে চাষ করা হয় । জীব বৈচিত্রের জন্য এখানে রয়েছে উদ্ভিদের পাশাপাশি বিভিন্ন বৈচিত্রের প্রাণীর সমাহার। আন্দিজ হলো পৃথিবীতে উভচর প্রাণীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ৬০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৪০০ প্রজাতির মাছের উদ্ভব হয়েছে এখানে। আন্দিজ পর্বতমালায় গড়ে উঠেছে বিচিত্র অনেক সংস্কৃতি। ইনকা সভ্যতা থেকে শুরু করে বর্তমান
সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্কৃতি ও উৎকর্ষ পরিলক্ষিত হয়েছে। মধ্য আন্দিজে ইনকাদের তৈরি অনেক রাস্তা এখনও দেখা যায় । এখানে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর অনেক পুরনো সভ্যতা । যার মধ্যে রয়েছে ইনকা সভ্যতা অন্যতম।
আন্দিজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ–বিদেশের বিভিন্ন পর্যটকরা এখানে বেড়াতে আসে। পাহাড়ে চড়া,সাইকেলিং এখানে অবসর যাপনের মধ্যে অন্যতম।