তথ্য ঝুঁকি বিংশ শতাব্দীর যুগে এসে তথ্য ঝুঁকি অথবা ইনফরমেশন রিস্কের প্রেক্ষাপট নানাভাবে পরিবর্তন হচ্ছে এবং পরিশীলিতভাবে পরিবর্তন হচ্ছে।তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার একদিকে যেমন মানুষকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে যেতে সাহায্য করছে অন্যদিকে তথ্য ঝুঁকির ফলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং হুমকিদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য ঝুঁকি, বলতে আমরা বুঝি এমন পরিস্থিতি যেখানে তথ্য বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান বা কোন প্রক্ষাপটের স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাওয়া,চুরি হওয়া, অনাধিকার হস্তক্ষেপ, ভুল হওয়া ইত্যাদি কার্যকলাপকে আমরা তথ্য ঝুঁকি বলতে পারি।
এটি এমন একটি বিস্তর ঝুঁকি যেখানে ক্ষতির সম্ভাবনার পরিধিটা অসীম।যেটা ব্যক্তিগত,ব্যবসায়িক কিংবা রাষ্ট্রীয় তথ্যোর সুরক্ষা, গোপনীয়তা,নিজস্ব মূল্যবোধের যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে।
তথ্য ঝুঁকির বৈশিষ্ট্য
তথ্য ঝুঁকি যে কোন ক্ষেত্রে অর্থাৎ সংস্থা বা ব্যক্তির তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তার কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যেমন: সাইবার অক্রমন, প্রযুক্তিগত সমস্যা, মানুষের সৃষ্টি ভুল কর্মকান্ড।
কিছু বৈশিষ্ট্য :
নিরাপত্তাহীনতা: নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, প্রতিষ্ঠানের তথ্যসমূহ, অনুপ্রবেশকারীদের হাতে চলে যেতে গেলে,গোপনীয়তার ঝুঁকি এবং নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যর অভাব: যদি কোন তথ্য পেতে সমস্যা সৃষ্টি হয়,কিংবা সার্ভার ডাউন ও প্রযুক্তিগত হয় তখন প্রাপ্যতার ঝুঁকি তৈরী হয়।
প্রযুক্তিগত ত্রুটি: বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ম্যালওয়ার, সাইবার আক্রমণ, হ্যাকার, সিস্টেম ত্রুটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির সৃষ্টি করতে পারে।
আইনগত ত্রুটি: নিরাপত্তা ব্যবস্থা দূর্বল বা লঙ্ঘন হলে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়া হলে,গুরুতর আর্থিক ক্ষতি ও আইনগত ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
আর্থিক ক্ষতি : সিস্টেমর ভুল তথ্য এন্ট্রি কিংবা যথাযথ পাসওয়ার্ডের ব্যবহার না করা কিংবা ভুল ফাইল আপলোড করা,তথ্য হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্য আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
এছারাও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার, আইনগত পরিবেশের যথাযথ প্রভাব না থাকলে বহিরাগত ঝুঁকি বাড়তে পারে। এতে তথ্য ঝুঁকি হয়।
তথ্য ঝুঁকি নিয়ন্রনে রাখতে হলে প্রযুক্তিগত সুরক্ষা, পরিকল্পনা ও মূল্যায়নের নীতিতে জোরদার হতে হবে।
বিংশ শতাব্দীতে এসে এই তথ্য ঝুঁকির প্রক্ষাপট গুলো লক্ষ করলে আমরা বুঝতে পারব।
ইন্টারনেশনাল কমিউনিকেশন কিংবা ডিজিটাল বিপ্লব। এক্ষেত্রে কম্পিউটার, ইন্টারনেটের ব্যবহার ও তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারের ফলে তথ্য সংগ্রহ করা,সংরক্ষণ করা,নিমেষেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর হয়ে যাওয়ার ফলে,গোপনীয়তা রক্ষা করাটা বড় চ্যলেন্জ্ঞ হয়ে দাড়িয়েছে।বিশেষত যেখানে নিজের ব্যক্তিগত নাম,ঠিকানা, ফোন নম্বর, আর্থিক লেনদেনের নানা তথ্য দেওয়া থাকে।যেমন :ব্যাংক একাউন্ট নম্বর কিংবা ক্রেডিট কার্ড ডিটেইলস ইত্যাদি।
আরেকটি অন্যতম দিক হলো,সাইবার ক্রাইম এবং হ্যাকিং।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ হলো, সাইবার ক্রাইম আক্রমন।
অনেক বড়ো নামি-দামি ব্যাংক,প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির গোপন তথ্য, পাসওয়ার্ড চুরি কিংবা তথ্য পরিবর্তন করা যায়।
ফিনিশিং আক্রমণের মাধ্যমে। অন্যদিকে আরেকটি সামাজিক ব্যধি হয়ে দাড়িয়েছে র্যানসমওয়্যার।যার মাধ্যমে হ্যাকাররা একটি নির্দ্রিষ্ট সিস্টেমের মাধ্যমে যে কোন ডিভাইস মধ্যো থাকা ডেটা হ্যাক করে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণের জন্য দাবি করে।যার ফলে মানুষকে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়।
আরেকটি বিশেষ সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,ডেটা প্রাইভেসি। আমরা অনলাইন প্লাটফর্মে নানা রকম কাজ করে থাকি। ব্যবসায়িক কাজ সম্পাদনের জন্য ই-কমার্সের নানা সাইট ইউজের ফলে নিজের বিষয়ে,প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নানা তথ্য দিয়ে রাখতে হয়। প্রশ্নটা হলো,এটা কতোটা সংরক্ষিত?
কারণ, তা যেকোনো সময়ে,তৃতীয় পক্ষের কাছে যাবে না, কিংবা প্রাইভেসির লঙ্ঘন হবে না এটা ১০০%নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
বর্তমান সময়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তির সুবিশাল উন্নতির ফলে,এখন মানুষের আকৃতি, কন্ঠ, মুখ ভাষা নকল করা সহজ হয়ে উঠেছে। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। যেমন: অ্যালগোরিদমিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণে ও গোপনীয়তার ঝুঁকি হতে পারে।এছাড়াও ডিভাইস দূর্বলতা অর্থাৎ IoT এর দূর্বলতা। স্মাট ফোন, গাড়ি,অফিস, মোবাইল অন্যান্য ডিভাইসের নিরাপত্তা দূর্বল হওয়ার জন্য হ্যাকাদের জন্য অনেক সুযোগের সৃষ্টি হয়ে যায়।
প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য ঝুঁকির সমস্যার মূল কারণ আইনি প্রতিবন্ধকতা। এর যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাব। আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নিয়মনীতি ও শক্ত প্রভাবের অভাব।নানা রকম সমস্যার সৃষ্টিও হচ্ছে, নিরাপত্তা আইন,ডেটা প্রাইভেসি আইন ইত্যাদির কার্যকর প্রভাব তথ্য আইনি কাঠামোতে যথাযথভাবে শক্তভাবে গঠন করা প্রয়োজন। এর অভাবে আন্তর্জাতিক তথ্য বিনিময় ও ডেটা সুরক্ষা নষ্ট হতে পারে,সাইবার ক্রাইমের মতো বড়ো বিপদ হতে পারে।
এছাড়াও ব্যবহারকারীর দূর্বল পাসওয়ার্ডের ব্যবহার ও পরিবর্তনের অভাব, সাইবার সুরক্ষা নীতির ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ইত্যাদির ফলে তথ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন : একজন ম্যানেজারের কীভাবে তার দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করবেন?
তথ্য ঝুঁকি এড়ানোর কিছু পদক্ষেপ।
তথ্য ঝুঁকি থেকে বাঁচতে সাইবার নিরাপত্তা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমবর্ধমান সুবিশাল হওয়ার ফলে কিছু বিষয় মনে চলা উচিত।
যেমন,পাসওয়ার্ডের ব্যবহারের ক্ষেত্রে শক্তিশালী এবং বুদ্ধিদিপ্ত শব্দের, অক্ষের ছোট বড় ও বিশেষ চিহ্নের ব্যবহার যা সহজেই কেউ যেন নকল করতে না পারে।অন্যর সাথে নিজের বক্তিগত তথ্য, ছবি,পাসওয়ার্ড শেয়ার থেকে বিরত থাকা। নিজের গোপনীয়তা রক্ষায় সচেষ্ট থাকা।নিরাপদ ওয়েবসাইট ব্যবহার করা,সর্তক থাকা।অজ্ঞাত ওয়েবসাইট ব্যবহারব ও ডাউনলোড থেকে বিরত থাকা।অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলো ইনস্টল ও আপডেট করা। অজানা, অপরিচিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ইমেইল বা লিংক না খুলা।ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা নিরাপত্তা খাতের নতুন নতুন সংস্কার, প্রযুক্তি ও আপডেটের সাথে নিজেকে পরিচিত রাখা।
সর্বশেষ, তথ্য ঝুঁকি নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান ও সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ ও সর্তকতা অবলম্বন করলে সাইবার ক্রাইম কিংবা তথ্য ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়ে উঠেবে।
1. তথ্য ঝুঁকির উদাহরণ কী কী?
ডেটা চুরি বা হ্যাকিং
ভুলভাবে তথ্য মুছে ফেলা বা পরিবর্তন করা।
2.তথ্য ঝুঁকি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
তথ্য ঝুঁকি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সংস্থার গোপনীয়তা, অখণ্ডতা এবং প্রাপ্যতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা আর্থিক ক্ষতি, সুনামহানি এবং আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।