চুল মানুষের সৌন্দর্য বাড়ায়।যখন চুল ঝরে পরতে শুরু করে তখন দুশ্চিন্তে পড়ে যায়।কারণ একজন মানুষের প্রতিদিন ১০০ টা চুল পড়া টা স্বাভাবিক।আর চুলে চিরুনি দিলেই যদি চিরুনি ভর্তি করে চুল উঠে তাহলে এটা অস্বাভাবিক ভাবে চুল পড়া বলি।এই চুল পড়ার রোধ করতে, কি কারনে চুল পড়ছে এটার সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
চুল পড়ার কারণ কি?
যেসব কারণে চুল পরে যায় তা হল :-
- জেনেটিক্স বা বংশগত :-এটি হলো বংশগত টাক।বংশগত কারণে যে কারোর চুল পড়তে পারে।
- ছেলেদের ক্ষেত্রে মাথা টাক হয়ে যায় আর মেয়েদের ক্ষেত্রে চুল পাতলা হয়ে যায়।
- টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম:-টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম হলো চুল পড়া এমন একটি সমস্যা।
- বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
- সাধারণত শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণে চুল পরতে পারে।
- আবার হরমোনের পরিবর্তন হলেও হতে পারে।
- অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা:-এই সমস্যা সাধারণত ছোট বাচ্চাদের দেখা যায়।
- যেমন :- বাচ্চাদের মাথায় টাক পরা,চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
- এটা এক ধরনের অটোইমিউন রোগ।
- যার ফলে মাথা ও শরীর থেকে চুল পড়ে যায়।
- অ্যানাজেন এফ্লুভিয়াম:-কেমোেথরাপি মতো কিছু চিকিৎসার কারণে দ্রুত চুল পড়ে যায়।
- থাইরয়েডের রোগের কারণে চুল পরতে পারে।
- চুলে প্রোটিন বা আয়রনের অভাব হলে চুল পরতে পারে।
- রক্তশূন্যতার কারনে চুল ঝরে যেতে পারে।
- বেশিরভাগ নারী চুল স্টেট বা কার্ল করলে।
- অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ করা হয়।
- ফলে চুলের ক্যারাটিন ক্ষতি হয় ফলে চুল ভেঙ্গে যায় এবং চুল পরেও যেতে পারে।
- সালফেটস,অ্যালকোহল যুক্ত অল্প যুক্ত চুলের পণ্য ব্যবহার করলেও চুল পরে যেতে পারে।
- গর্ভবতী কালেও চুল পরতেপারে।
- তবে এটি অস্থায়ী।
- এক বছর পরে চুল পরা বন্ধ হয়ে যায়।
- জন্ডিস, টাইফয়েড জ্বরের কারণে অনেক সময় চুল পড়ে।
- অতিরিক্ত ডায়েটের কারণেও চুল পড়তে পারে।
- আমরা অনেকেই ভেজা চুল আঁচড়াই।
- চুল যখন ভেজা থাকে তখন চুলের গোড়া নরম থাকে।
- তাই ভেজা চুল আঁচড়ালেই চুল হবে।
- অতিরিক্ত কাজের চাপেও চুল পড়ে।
চুল পড়া রোধ করতে কি খাবার খাবেন ?
বাদাম :-
- যেমন চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, ওয়ালনাট।
- এগুলোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিশেষ করে ও মেগা -৬ ফ্যাট।
- যা চুলের গোড়া সচেত রাখতে আর চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।
- আমাদের শরীর নিজ থেকে খাদ্য তৈরি করতে পারে না খাবার থেকে নিতে হয়।
- এতে করে চুল পড়ে যায়, চুলের রং হালকা হয়ে যায়।
- তাই প্রতিদিন নাস্তায় কিছু বাদাম রাখতে পারেন।
হলুদ আর কমলা রঙের সবজি এবং ফলমূল:-
- যেমন মিষ্টি আলু, গাজর, আম, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে।
- চুলের গোড়া থেকে চুলটা বড় হয় সেটা ঠিকমত কাজ করার জন্য দরকার ভিটামিন এ।
- আর সেটা খুব ভালো উৎস হল কমলা রঙের ফল ও সবজি।
- দিনে যতখানি ভিটামিন এ দরকার আধা কাপ গাজর তার অর্ধেকের বেশি হয়ে যায়।
- তাই দিনের কিছু হলুদ ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ডিম :-
- সুন্দর চুলের জন্য ডিম আপনার খুব ভালো বন্ধু। কেন বুঝিয়ে বলি আমাদের চুল শর্করা বা ফ্যাটে তৈরি না।
- চুল প্রায় পুরোটাই প্রোটিন তৈরি।
- আর গবেষণা করে জানা গিয়েছে খাবারের প্রোটিনের অভাব হলে চুল পড়ে যায় তাই সুন্দর চুলের জন্য খাবারের তালিকায় ডিম রাখবেন।
পালং শাক :-
- চুলের উপকারে জন্য পালং শাক খাবেন।
- কারণ পালং শাকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে ।
- যা চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়। ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি’,আয়রন ।
- এগুলো চুলকে ঘন কালো সুন্দর করতে সাহায্য করে।
বীজ :-
- যেমন চিয়াসিডস,মিষ্টি কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, তিসির বীজ।
- এগুলোতে সুন্দর চুলের জন্য অনেকগুলো উপাদান আছে।
- যেমন চিয়াসিডস আছে প্রচুর পরিমণে আলফা-লিনোলিনিফ এসিড,মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে জিংক,সূর্যমুখীতে আছে বায়োটিন, তিসিতে আছে সেলেনিয়াম।
- চুল পড়ার সাথে এগুলো অভাবের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
ছোলা :-
- চুলার চুলের জন্য তিনটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে।
- আয়রন, জিংক, প্রোটিন।
- এই তিনটি যেকোনো একটা হলে চুল পড়তে পারে।
- তাই চুল পড়া রোধে মাঝে মাঝে ছোলা খেতে পারেন।
ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া রোধ করার উপায়।
নারী পুরুষ সবারই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন অতিরিক্ত চুল পড়া চিন্তার বিষয়।
চুল পড়তে পড়তে অনেকেই টাক হয়ে যায়।আমরা চাইলেই ঘরোয়া উপায়ে চুল বন্ধ করতে পারি ।যেমন:-
ডিম :-
- ডিমের সাথে অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে এক ঘন্টা চুলে লাগিয়ে রাখুন।
- এক ঘন্টা পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
- এটি চুল পড়া বন্ধ করে এবং দ্রুত চুল গজাতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেল:-
- চুলের যত্নে একবার হলেও নারকেল তেল ব্যবহার করবেন।
- এটি চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।
- চুলের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে ও রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
নিম পাতা :-
- নিম পাতা বেটে রস বের করে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়।
অ্যালোভেরা :-
- অ্যালোভেরা জেল ব্লেড করে চুলে লাগিয়ে রাখুন এক ঘন্টা।
- তারপর ধুয়ে ফেলুন।
- শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নাই।
- কারণ অ্যালোভেরা চুলকে পরিষ্কার করে এবং অ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলে চুলে খুশকি কমায় এবং চুলকে কন্ডিশনার কাজ করে।
মেথি:-
- মেথিকে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন।
- তারপর বিজানো মেথিটি বেটে তার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন।
- এতে করে চুলের গোড়া শক্ত ও চুল পড়া বন্ধ হবে।
- সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাবেন।
আলু ও পেঁয়াজের রস :-
- আলুর রস ও পেঁয়াজের রস মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন এবং হালকা ম্যাসেজ করুন।
- ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এতে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আমলা:-
- একটি পাএে নারকেল তেলের সাথে শুকনো আমলা নিয়ে জাল দিতে থাকি যতক্ষণ না কালো না হয়।
- তারপর তেলটি ঠান্ডা করে মাথায় ত্বকে ভালো করে লাগায় আর ম্যাসাজ করি।
- দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে চুল পড়া বন্ধ হবে।
অয়েল ম্যাসাজ:-
- আমরা অনেকেই মাথায় তেল দিতে পছন্দ করি না।তবে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি,চুল পড়া বন্ধ করতে তেলের কোন বিকল্প নেই।
- সপ্তাহে তিন দিন রাতে ঘুমানোর আগে তেল গরম করে মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করুন এবং পরের দিন শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলোন।
- তাতে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।
গ্রিন ট্রি :-
- গ্রিন ট্রি তে ভিটামিন ই থাকে।
- এটিকে পানির সাথে মিশিয়ে গরম করি।তারপর মাথায় ত্বকে লাগায়।
- এতে করে চুলকে সিল্ক ও নরম করে।চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
- চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। চুল পড়া রোধ করে।
জবা ফুল :-
- জবা ফুল বেটে অ্যালোভেরার সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
- এতে চুল পড়া কমবে।আর এই প্যাক টি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
চুল পড়া ডাক্তার কখন দেখাবেন?
- যদি আকস্মিকভাবে চুল উঠা শুরু করে বা মাথায় ত্বকে চুলকানি, ব্যথার মত অতিরিক্ত লক্ষণ গুলো দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- চুলকে সুন্দর রাখতে একটি রুটিন তৈরি করুন।
- সেই অনুযায়ী চুলের যত্ন নিন। চুল পড়া হাত থেকে বাঁচুন।