শিল্প কী? শিল্প কত প্রকার তা বিশ্লেষণ কর শিল্প হলো মানুষের সৃষ্টিশীল চিন্তা, দক্ষতা ও অনুভূতির এক অনন্য প্রকাশ,যা নান্দনিক সৌন্দর্য এবং ভদবনার গভীরতা প্রদর্শন করে। শিল্পের মূল উদ্দেশ্য মানুষের চিন্তা-ভাবনা, সংস্কৃতি এবং অভিজ্ঞতাকে নতুন ভাবে প্রকাশ করা। বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে শিল্প কে ভাগ করা হয়েছে। তবে আজকের সেশনে আলোচনা করা হবে শিল্পের মূল শ্রেণি বিভাগ বা প্রক্রিয়া গত যে শ্রেণি বিভাগ গুলো রয়েছে সেগুলোর বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। আপনাদের সুবিধার্থে এটির পিডিএফ রাখা হয়েছে। ব্লগটির নিচে গেলেই পাবেন PDF Download লিখা সেখানে ক্লিক করলেই ডাউনলোড হয়ে যাবে। যা অফলাইনেও পড়তে পারবেন। এখন শুরু করি মূল আলোচনা। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান।
শিল্প কী?
শিল্প হলো মানুষের সৃষ্টিশীল চিন্তা, দক্ষতা ও অনুভূতির এক অনন্য প্রকাশ,যা নান্দনিক সৌন্দর্য এবং ভদবনার গভীরতা প্রদর্শন করে। শিল্পের মূল উদ্দেশ্য মানুষের চিন্তা-ভাবনা, সংস্কৃতি এবং অভিজ্ঞতাকে নতুন ভাবে প্রকাশ করা।
শিল্পের কিছু প্রমান্য সংজ্ঞা।
- এরিস্টটল বলেছেন : “শিল্প হলো প্রকৃতির অনুকরণ। এটি সেই প্রক্রিয়া যেখানে মানুষ কল্পনা ও দক্ষতার মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য প্রকাশ করে।”
- প্লেটো বলেছেন : “ শিল্প প্রকৃতির ছায়ামাত্র। এটি সত্যের অনুকরণ এবং বাস্তবতার রুপান্তর।”
- হেগেল বলেছেন : “শিল্প হলো সেই মাধ্যম যার মাধ্যমে মানব আত্মা তার ভাবনা ও অনুভূতিকে দৃশ্যমান রূপে প্রকাশ করে।”
- অধ্যাপক এম.সি. শুল্কা বলেছেন : পণ্যদ্রব্যের উত্তোলন, উৎপাদন, রূপান্তর, প্রক্রিয়াকরণ কিংবা সংযোজন প্রক্রিয়া কে শিল্প বলে”
- অধ্যাপক এল কবীর বলেছেন : “পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্মের উৎপাদন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী কে শিল্প বলে।”
- পিকাসো বলেন, “শিল্প হলো সেই মিথ্যা,যা আমাদের সত্য কে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।”
সবশেষে, উৎপাদনের সকল কর্মপ্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ করে তার রুপান্তর ঘটিয়ে মানুষের ভোগ ও ব্যবহার উপযোগী করার জন্য আরও অধিকতর উপযোগ সৃষ্টি করা হয়, তাকেই শিল্প বলা হয়।
শিল্পের প্রকারভেদ বিশ্লেষণ
শিল্প মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রকৃতির সম্পদকে মানুষের ভোগ ও ব্যবহারের জন্য আরও উপযোগী করে তোলে। বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে শিল্পকে ভাগ করা যায়। তবে এখানে আমরা মূলত প্রক্রিয়াগত দৃষ্টিকোন থেকে শিল্পের শ্রেণি বিভাগ নিয়ে আলোচনা করবো। শিল্পের এই প্রকারভেদ নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।
১. প্রাথমিক শিল্প : প্রাথমিক শিল্প বলতে প্রকৃতির সরাসরি দান সমূহকে সংগ্রহ ও ব্যবহারযোগ্য করার প্রক্রিয়া কে বোঝায়। এই শিল্পের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা ও জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপড় নির্ভর করে সম্পদ আহরণ করা হয়। প্রাথমিক শিল্প কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে : যথা-
ক) কৃষি শিল্প : যে শিল্প কৃষি কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, তাকে কৃষি শিল্প বলা হয়।
উদাহারণ:
- ধান,গম,ভুট্টা, পাট,আখ,তুলা, তিল ইত্যাদি উৎপাদন হয়।
- শাকসবজি ও মসলা জাতীয় পণ্য।
খ) প্রজনন শিল্প :
প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্পদের সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করাকে প্রজনন শিল্প বলা হয়। এই শিল্পে মূলত জীবন্ত সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ :
- পশুপালন ( গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি)
- মৎস চাষ।
- ফলমূলের উৎপাদন এবং গাছপালার চাষ।
গ) নিষ্কাশন শিল্প :
নিষ্কাশন শিল্প বলতে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বা উত্তোলনের কাজ বোঝায়। এটি সাধারণত প্রাকৃতিক সম্পদ সরাসরি সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ :
- বন থেকে কাঠ সংগ্রহ।
- খনি থেকে লোহা, সোনা, তেল বা গ্যাস উত্তোলন ।
- নদী বা সমুদ্র থেকে মাছ সংগ্রহ।
২. দ্বিতীয় স্তরের শিল্প :দ্বিতীয় স্তরের শিল্পে প্রাথমিক শিল্প থেকে সংগৃহীত সম্পদকে প্রক্রিয়াজাত করে মানুষেমানুষের ভোগের জন্য উপযোগী করা হয়। এটি উৎপাদন, নির্মাণ এবং সেবা পরিবেশন শিল্পের সমন্বয়ে গঠিত।
ক। উৎপাদন শিল্প :
যে শিল্প প্রাথমিক সম্পদকে রূপান্তর করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলে তাকে উৎপাদন শিল্প বলে।
উদাহরণ :
- পাট থেকে চট এবং দড়ি তৈর।
- তুলা থেকে সুতা এবং কাপড় তৈরি।
- চিনি তৈরির জন্য আখ প্রক্রিয়াকরণ।
খ। নির্মাণ শিল্প :
নির্মাণ শিল্প এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অবকাঠামো তৈরি করা হয়। এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণ :
- ঘরবাড়ি নির্মাণ।
- রাস্তা ঘাট,সেতু,বাধ তৈরি।
- রেলপথ ও বিমানবন্দর তৈরি।
গ। সেবা পরিবেশন শিল্প :
যেসব শিল্প সরাসরি জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে, সেগুলো সেবা পরিবেশন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। এটি আধুনিক জীবনযাপনের একটি অপরিহার্য অংশ।
উদাহরণ :
- বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ।
- গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা।
- পানীয় জল সরবরাহ।
- টেলিযোগাযোগ এবং পরিবার পরিবহন পরিষেবা৷
শিল্প কি ও শিল্পের গুরুত্ব আলোচনা :
শিল্প হলো এমন একটি প্রক্রিয়া,যা মানুষের জীবন ও সমাজের ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি শুধুমাত্র মানুষের ভোগ বা ব্যবহারিক চাহিদা পূরণেই নয় বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি জাতির সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এখানে শিল্প সম্পর্কে অনেক আলোচনা তুলে ধরেছি৷ শিল্প কি? শিল্প কত প্রকার ও কি কি সকল বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
শিল্পের গুরুত্ব :
১. অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা
শিল্প একটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করে। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে এবং রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করে।
- শিল্প উৎপাদন থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি।
- রপ্তানি পণ্য যেমন পাট,চামড়া, গার্মেন্টস ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান।
২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি
শিল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
- পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
- নির্মাণ শিল্পে শ্রমিকদের ভুমিকা।
৩. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন :
শিল্প মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত করে। এটি দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে।
- টেক্সটাইল শিল্পের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে কাপড় সরবরাহ।
- প্রযুক্তি শিল্পের মাধ্যমে আধুনিক ডিভাইস ও সেবা।
৪. সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা
শিল্প সমাজের কাঠামোতে পরিবর্তন আনে। এটি শিক্ষার প্রসার, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং নতুন নতুন ধারণার উদ্ভাবনে সহায়তা করে।
- টেলিযোগাযোগ শিল্পের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করা।
- পরিবহণ শিল্পের উন্নতির ফলে মানুষের জীবন আরও গতিশীল হয়েছে।
৫. জাতীয় স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি
শিল্প একটি জাতিকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমায়।
- স্থানীয় কৃষি শিল্প ও উৎপাদন শিল্পের বিকাশ।
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন।
৬. প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার
শিল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
- জলবিদ্যুৎ শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন।
- পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
শিল্পের চ্যালোঞ্জ
পড়া হলো শিল্প কী? এখন জানবো শিল্পের চ্যালেঞ্জ গুলো।
১. পরিবেশ দূষণ : শিল্প থেকে নির্গত বর্জ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
২. শ্রমিকের অধিকার : অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত হয় না।
৩. প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার: শিল্পের অযাচিত প্রসারের কারনে প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার হতে পারে।
শিল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনা :
শিল্পায়নকে টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব করতে পারলে এি আগামী দিনে আরও বড় ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
সকল বিষয়ের সাজেশন পেতে ওয়েবসাইটে ফলো করুন। সকল বিষয়ের নির্দেশিকা পেতে ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন কোনো সমস্যা হলে আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজ ইনবক্স করুন।
প্রিয় শিক্ষার্থিরা অন্যান্য সকল বিষয়ের সাজেশন পেতে আমাদের YOUTUBE চ্যানেল দ্রুত Subscribe করো।
ইতিমধ্যে সকল বিষয় নিয়ে সাজেশন দেওয়া হয়েছে। আরো নতুন কিছু আপডেট পেতে চোখ রাখুন (ERIN) ধন্যবাদ।