আপনি কি কখনো এমন সময় কাটিয়েছেন, যখন চারপাশে আনন্দের ঋতু এলেও আপনার মন খুশি হতে পারেনি? ঠিক এই অনুভূতির কথা বলে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি। এই কবিতার মূলভাব খুঁজতে গেলে দেখতে পাবেন, এখানে কবি সুফিয়া কামাল নিজের জীবনের গভীর দুঃখ, প্রিয়জন হারানোর শূন্যতা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে মানুষের মনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছেন। আপনার জীবনেও হয়তো এমন সময় এসেছে, যখন চারপাশে উৎসব, নতুন ঋতু, ফুল-ফল, সবকিছু থাকলেও মনটা একেবারে খালি খালি লাগে। এই কবিতার মূল কথা ঠিক এই অনুভূতির সাথেই মিলে যায়। কবিতাটি শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, বরং জীবনের গভীর বাস্তবতা উপলব্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আপনি জানতে পারবেন, কীভাবে কবি ব্যক্তিগত শোককে কবিতার ভাষায় প্রকাশ করেছেন, কেন বসন্তের আনন্দও তার মনকে ছুঁতে পারেনি, এবং কীভাবে এই কবিতা আমাদের সকলের জীবনের এক চিরন্তন সত্য কথা বলে।
তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মূলভাব

কবিতার সারাংশ ও মূল বক্তব্য
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূলভাব হচ্ছে—প্রিয়জন হারানোর শোক মানুষের মনে যে শূন্যতা সৃষ্টি করে, তা কোনো বাহ্যিক আনন্দ বা প্রকৃতির সৌন্দর্য দিয়েও পূরণ করা যায় না। কবি সুফিয়া কামাল তার স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের অকাল মৃত্যুতে যে গভীর শোক ও রিক্ততা অনুভব করেছেন, সেটাই কবিতার কেন্দ্রবিন্দু। বসন্ত এসেছে, ফুল ফুটেছে, পাখি ডেকেছে—তবু কবির মন ভরেনি। শীতের বিদায়ের বিষাদ তার হৃদয় জুড়ে রয়ে গেছে। কবি-ভক্ত বারবার কবিকে অনুরোধ করেছেন, আবার কবিতা লিখুন, বসন্ত বন্দনা করুন, কিন্তু কবি পারেননি। কারণ, তার হৃদয় এখনো শোকের ভারে ক্লান্ত।
কবিতার নাটকীয়তা ও সংলাপ
এই কবিতার আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে সংলাপনির্ভর গঠন। এখানে কবি ও কবি-ভক্তের মধ্যে কথোপকথন হয়েছে। কবি-ভক্ত কবিকে উৎসাহিত করছেন, আবার সৃষ্টিশীল হোন, বসন্তের সৌন্দর্যকে কবিতায় তুলে ধরুন। কিন্তু কবি তার শোক ভুলতে পারছেন না। এই সংলাপ কবিতাটিকে জীবন্ত ও মানবিক করে তুলেছে।
কবিতার প্রতীক, ভাষা ও ছন্দ
প্রতীক ও চিত্রকল্প
- বসন্ত: নতুন জীবনের প্রতীক, আনন্দ ও সৃষ্টির ঋতু।
- শীত: বিষাদ, শোক ও শূন্যতার প্রতীক।
- ফুল, পাখি, দখিনা বাতাস: প্রকৃতির সৌন্দর্য ও নবজাগরণের চিহ্ন।
- কবির নীরবতা: গভীর মানসিক কষ্ট ও শোকের প্রতিফলন।
ভাষা ও ছন্দ
- কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা, প্রতি চরণে দুটি পর্ব (৮+১০ মাত্রা)।
- সহজ, সংলাপনির্ভর ভাষা, যা পাঠককে সহজেই আকৃষ্ট করে।
- প্রশ্ন ও উত্তর, মিনতি ও প্রত্যাখ্যান—এই দ্বন্দ্ব কবিতার আবেগকে আরও গভীর করেছে।
কবিতার মূলভাব ও জীবন বাস্তবতা: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
বিষয় | তাহারেই পড়ে মনে কবিতা | সাধারণ বসন্তের কবিতা |
---|---|---|
মূলভাব | শোক, শূন্যতা, বিষাদ | আনন্দ, উল্লাস, সৃষ্টিশীলতা |
কবির মানসিক অবস্থা | শোকাচ্ছন্ন, উদাসীন | উচ্ছ্বসিত, অনুপ্রাণিত |
প্রকৃতির প্রভাব | মন ছুঁতে পারেনি | মনকে আনন্দিত করে |
সংলাপ | আছে | সাধারণত নেই |
ছন্দ | অক্ষরবৃত্ত (৮+১০) | বিভিন্ন ছন্দ |
কবিতার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এক নজরে
- কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে।
- কবি: সুফিয়া কামাল।
- কবিতার মূল চরিত্র: কবি ও কবি-ভক্ত।
- মোট চরণ: ৩০টি।
- ছন্দ: অক্ষরবৃত্ত (৮+১০ মাত্রা)।
- প্রতীক: শীত, বসন্ত, ফুল, পাখি, দখিনা বাতাস।
- মূল বিষয়: প্রিয়জন হারানোর শোক, প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানসিক শূন্যতা।
কবিতার পাঠ ও বোঝার জন্য সহজ টিপস
- কবিতার সংলাপগুলো পড়ে বুঝতে চেষ্টা করুন, কে কী বলছে এবং কেন বলছে।
- বসন্ত ও শীতের প্রতীকী অর্থ খেয়াল করুন।
- কবি-ভক্তের অনুরোধ ও কবির উত্তর—এই দ্বন্দ্ব বুঝে পড়ুন।
- কবিতার ছন্দ ও ভাষার মাধুর্য উপভোগ করুন।
- কবিতার মূলভাব মনে রাখুন—শোকের ভারে কখনো কখনো আনন্দও ম্লান হয়ে যায়।
বাস্তব জীবনে কবিতার প্রয়োগ
আপনার জীবনে যদি কখনো বড় কোনো দুঃখ আসে, তখন চারপাশের আনন্দও অনেক সময় অর্থহীন মনে হয়। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ঠিক এই অনুভূতির কথা বলে। কবিতাটি পড়ে আপনি বুঝতে পারবেন, দুঃখ, শোক, শূন্যতা—সবই মানুষের জীবনের অংশ। তবুও সময়ের সাথে মানুষকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হয়। এই কবিতার মতোই, আপনিও একদিন নতুন আনন্দ খুঁজে পাবেন।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মূলভাব কী?
প্রিয়জন হারানোর শোক, মানসিক শূন্যতা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যও যখন মনকে ছুঁতে পারে না—এই অনুভূতি কবিতার মূলভাব।
২. কবিতার প্রধান চরিত্র কারা?
কবি নিজে এবং কবি-ভক্ত—এই দুই চরিত্রের সংলাপে কবিতাটি গড়ে উঠেছে।
৩. কবিতায় বসন্ত ঋতু কীভাবে চিত্রিত হয়েছে?
বসন্ত এসেছে, ফুল ফুটেছে, পাখি ডেকেছে—তবু কবির মন শোকাচ্ছন্ন থাকায় বসন্তের সৌন্দর্য তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারেনি।
৪. কবিতার ছন্দ ও গঠন কেমন?
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা, প্রতি চরণে দুটি পর্ব (৮+১০ মাত্রা), সংলাপনির্ভর রচনা।
৫. এই কবিতা থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়?
জীবনে দুঃখ থাকলেও, সময়ের সাথে মানুষকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হয়। শোকের মধ্যেও নতুন আশার আলো খুঁজে নিতে হয়।
উপসংহার: কবিতার মূল শিক্ষা ও আপনার জন্য বার্তা
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূলভাব আমাদের শেখায়—শোক, শূন্যতা, বিষাদ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতির সৌন্দর্য, নতুন ঋতু, সবকিছু থেকেও মন কখনো কখনো খালি থাকে। তবুও, জীবন থেমে থাকে না। আপনিও যদি এমন কোনো সময়ের মধ্য দিয়ে যান, মনে রাখবেন—সময় বদলায়, মনও একদিন নতুন আনন্দ খুঁজে পায়। কবিতাটি শুধু পড়ার জন্য নয়, বরং জীবনের গভীর উপলব্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কবিতার এই বার্তা আপনার মনকে ছুঁয়ে গেলে, অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন—তাহলে সবার জীবনেই কিছুটা হলেও নতুন আলো জ্বলবে।