আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ মৌরিতানিয়া। মৌরিতানিয়া সরকারি নাম ইসলামিক রিপাবলিক অফ মৌরিতানিয়া। এটি পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশের মধ্যে অন্যতম।
মরিতানিয়া, আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মৌরিতানিয়া উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। এটি বিশ্বের আঠারোতম বৃহত্তম দেশ বা নির্ভরতা, আফ্রিকার একাদশতম বৃহত্তম সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং বৃহত্তম দেশটি পুরোপুরি এক হাজার মিটার উচ্চতার নিচে অবস্থিত।
রাজধানী : নওকাচট
ডায়ালিং কোড: +২২২
রাষ্ট্রপতি: মোহাম্মদ ওলদ গাজৌনী
জনসংখ্যা: ৪.৫২৬ মিলিয়ন (২০২০)
৪০%লোক দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে । যার মধ্যে ২০% লোকের দৈনিক আয় ১.২৫ ডলার যা ১০০ টাকার ও কম।মৌরিতানিয়ার মুদ্রার নাম ওগুইয়া। ১ ওগুইয়া সমান বাংলাদেশী ২ টাকা ৩৬ পয়সা এবং ২.০১ ভারতীয় রুপি। নুয়াকশুত মৌরিতানিয়ার রাজধানী। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত । মৌরিতানিয়া কে আফ্রিকার চোখ বলা হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান
এটি পশ্চিম আফ্রিকায় আটলান্টিকের পাড়ে অবস্থিত। দেশটির উত্তরে পশ্চিম সাহারা, পূর্ব দক্ষিণ পূর্বে মালি,দক্ষিণ–পশ্চিমে সেনেগাল অবস্থিত। আফ্রিকার একাদশতম বৃহত্তম রাষ্ট্র মৌরিতানিয়া। তবে দেশটির 90 শতাংশ ভূমি সাহারার মধ্যে। দক্ষিণের দিকে ঘনবসতি বেশি।
অর্থনৈতিক অবস্থা
খনিজ সম্পদে ভরপুর হওয়া সত্বেও মৌরিতানিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। জনগণ মূলত কৃষি ও পশুপালন এর উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিককালের খরার জন্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। বিশেষ করে লৌহ আকরিক। এখানেই বিশ্বের সবথেকে বেশি লৌহ আকরিক মজুদ বিদ্যমান। যা মৌরিতানিয়ার সবথেকে বেশি রপ্তানি পণ্য। এছাড়াও সম্প্রতি দেশটিতে তেলের খনি আবিষ্কার হয়েছে। যা রপ্তানির ভিত্তিতে লৌহ আকরিক কে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতিহাস
মৌরিতানিয়া শব্দের অর্থ মূর্দের ভূমি বা মুর উপজাতির গোষ্ঠীর নাম হতে দেশটির নাম হয় মৌরিতানিয়া। ১৯০০ শতকের শেষ দিকে ফরাসিরা উত্তরা পশ্চিম আফ্রিকা তে ঔপনিবেশিক অভিযান চালানো শুরু করে। তারা সেনেগাল নদী ধরে মৌরিতানিয়া তে প্রবেশ করে ও ১৯২০ সালের মধ্যে মৌরিতানিয়া ফ্রান্সের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়।এরপর ১৯৫৮ সালের ২৮ নভেম্বর মরিতানিয়া নিজেকে ফরাসি পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের অধীনস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। দুই বছর পরে ১৯৬০ সালের ২৮ শে নভেম্বর এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
নিচের বিষয়গুলো জানতে ঘুরে আসতে পারেন
►সেনজেন কাকে বলে ? বিস্তারিত জানুন ।
►পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে যে সকল দেশ |
►►আয়ারল্যান্ড দেশ – সকল তথ্য সমূহ
►►ফিজি দেশ
►►আজারবাইজান দেশ -সকল তথ্য সমূহ
জনসংখ্যা ও আয়তন
১০,৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার দেশটিতে বর্তমান মোট জনসংখ্যা ৪৪ লাখ ৩ হাজার। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের 28 তম দেশ।
ধর্মীয় অবস্থা ও ভাষা
আরবি ভাষা মৌরিতানিয়ার সরকারি ভাষা। প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ স্থানীয় মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও ফরাসি ভাষায় দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডের ফরাসি ভাষা ব্যবহার করা হয়। ধর্মের ক্ষেত্রে একক আধিপত্য শুধু ইসলাম ধর্মের। দেশটির শত ভাগ মানুষ মুসলমান । আবে দেশটিতে সামান্য কিছু খ্রিস্টান ধর্ম অনুসারী আছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু
দেশটিতে একটি গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিদ্যমান। যা মূলত মরুভূমি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। এখানে বছরের বেশিরভাগ সময়ই তাপমাত্রা ২৫°সেলসিয়াসের উপরে থাকে তবে কিছু সময় তারা বেড়ে ৩৩°সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।মৌরি তানিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় অনুর্বর।তবে দেশটির মাঝখানে কিছু পাহাড় রয়েছে। দেশের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ এলাকা মরুভূমিতে আবৃত ।এসব এলাকাতে জনবসতি প্রায় নেই বললেই চলে। বাকি 10% এলাকাতে দেশের সিংহভাগ মানুষ বাস করে। এলাকাগুলো মূলত আটলান্টিকের তীরবর্তী ।
পর্যটন শিল্প
মৌরিতানিয়ার উপকূল মূলত একটি দীর্ঘ বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। যা প্রায় উদ্ভিদ বিহীন। তবে এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির এক বিস্ময়কর সমারোহ। যার ফলে দেশটি দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের এত বেশি জনপ্রিয়। মৌরিতানিয়া তে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম জাহাজ সমাধি। বিশ্বে দাসত্ব প্রথা মৌরিতানিয়ায় সর্বশেষ রাষ্ট্র। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে মৌরিতানিয়া দাস নিষিদ্ধ করে।
শিক্ষা , খাদ্য, স্বাস্থ্য,ও বিনোদন
দেশটিতে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা খুব বেশি ভালো নয় । দেশের মানুষের গড় আয়ু ৬১ বছর। এখানে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য ডাক্তার রয়েছেন ১১ জন।দেশটিতে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক।
তবে প্রয়োজনীয় স্কুলের ঘাটতি থাকায় বেশির ভাগ শিশু শিক্ষা বঞ্চিত। দেশের মোট জনসংখ্যার শুধুমাত্র ৬১% লিখতে ও পড়তে পারে।
মৌরিতানিয়া সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল । এছাড়াও বাস্কেটবল খেলা ও জনপ্রিয় রয়েছে।