বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপের সাথে “ বিদায়” নামক শব্দটা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। যেমন: প্রতিদিন যাদের সকালের সূর্যটাকে দেখতে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়,সারাদিন ক্লান্তহীনভাবে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণতি দেওয়ার জন্য ছুটে চলে,তারাও দিনশেষে ক্লান্ত হয় এবং ঘুমিয়ে যায়। অর্থাৎ গোটা একটা “দিন”বিদায় গেছে। একদিনের হায়াতেরও কবর হয়ে গেছে। তাই প্রথম বিদায় বার্তাটা নিজের সত্তাকে আমরা নিজেরাই দিতে পারি। জীবনের অঙ্ক মিলাতে গিয়ে, পরিশ্রম, অধ্যবসায়,ত্যাগ করতে হয়। ছোট থেকে বড় হওয়া, বেড়ে ওঠার সময়টাতে স্কুল, কলেজ সকল ক্ষেত্রেই আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই,শিক্ষকদের সংস্পর্শে আমরা জীবনের লক্ষ্যো খুঁজে পাই। নানান অনুকূল এবং প্রতিকূল পরিবেশ,প্রিয় বন্ধুের সাথে সময় পার করি। বাস্তবতা বুঝতে শিখি।
স্বপ্নকে বাস্তবে ধরার জন্য, আমরা ভার্সিটি,দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়াই। কারণ আমাদের বেঁচে থাকার আশা এবং উৎসাহ দেয় জোগায় আমাদের স্বপ্ন। তাই, কতো কতো মায়া,ভালবাসার প্রিয় মানুষ, জায়গা, মুহূর্তকে আমরা হারিয়ে ফেলি এবং বিদায় জানাই প্রকৃতির নিষ্টুর “সময় “ নামক বেড়াজালের জন্য।বিদায় দিতে হয়,অনিচ্ছায়। জীবনের প্রয়োজনে,আগামীর পথে এগিয়ে যেতে। তাই বিদায়ি নেওয়া মূর্হুতের অনুভূতি গুলোকে আমরা লিখে রাখি,সাজিয়ে রাখি কথা,ছন্দের মাধ্যমে কিংবা ব্যক্ত করে। প্রিয় সময় গুলো স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারি। যা আমাদের উৎসাহ দেয়, শিক্ষা দেয়, আগামী দিনের চ্যালেন্জ্ঞ গুলোকে মোকাবেলা করতে পারার জন্য। “বিদায়” শব্দটার পরিসীমার চক্রটা আর নিখুঁত সৌন্দর্যটা সারাজীবন আমাদের স্মৃতিতে থেকে যায়।
আরো পড়ুন : সম্পদ কাকে বলে ?
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য বাংলা।
বিদায় মানে হলো,স্থানের পরিবর্তন, নতুন মুহূর্তের অগমন। বাস্তবতা এমন এক বিদ্যালয় যেখানে কোন ব্যক্তি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা অর্জন করতে পারে। যেখানে কোন নির্ধারিত বই কিংবা সিলেবাস না থাকলে নতুন নতুন পাঠ তৈরী হয়ে যায়। আমরা চাইলেও আবেগের ত্বারণায় সেই স্থান, পরিবেশ,কর্মস্থলে থাকতে পারি না যা,আমাদের জন্য অতি প্রিয় বিষয় হয়ে থাকে।
তাই জীবনের এই বাস্তবতা নামক বিদ্যালয়ে আমরা শিখি,কিভাবে সফলতার পথে ধাপ তৈরি করা যায়। বুঝতে শিখি কষ্টের ভেতর লুকিয়ে থাকা আত্মশক্তিকে কিভাবে জাগিয়ে তুলতে হবে জিবনের প্রতিটি ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়, পরিশ্রমের গুরুত্ব টা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ কিংবা সম্পর্কের মূল্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমাদের জন্য। বিদায় হয়ে যাওয়া “সময়টাকে” শিক্ষা হিসেবে নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারলে আসল সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে।
বাস্তবতার বিদ্যালয়ে সময় হলো প্রধান শিক্ষক। আর বিদায় হলো শেষ পরিনতি বা অধ্যায়। প্রধান শিক্ষক সময়,আমাদের ধৈর্য ধরতে শিখায়।প্রতিটি ভুল,হতাশা আমাদের জন্য নতুন এক অধ্যায়, প্রতিটি ব্যর্থতা নতুন এক শুরু।তাই বিদায় মানেই প্রস্থান হলেও, অনেক মূল্যবোধের ভান্ডার আমার স্মৃতির ঝুলিতে জমা হয়ে যায়। বাস্তবতার এই পাঠশালাটি কোন ব্যক্তি আমাদের শেখায় না, বরং পরিস্থিতি, অভিজ্ঞতা আর আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত আমাদের শিক্ষা দেয়।
“বিদায় “ শিখিয়ে দেয়,জীবন হলো অমসৃণ পথ।এখানে আনন্দ আর বেদনার মিশ্রণেই চলতে হয়। যারা এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারে তারাই জীবনে আলোকিত হতে পারে। দুনিয়ায় অমর হয়ে কেউ আসেনি। নিঃশ্বাস শেষ হয়ে গেলে এই দুনিয়া থেকেও বিদায় নিতে হবে।
এটাই নির্মম সত্য কথা। এই কথাটা অমারা জানি,এবং মাথায় রেখে যেমন জীবনের তাগিদে এগিয়ে যাচ্ছি,তেমনি নিজের প্রিয় স্কুল, কলেজ কিংবা নিজের প্রিয় শিক্ষকের সানিধ্যকে আমাদের বিদায় দিতে হচ্ছে, আগামীর তারণায়।
বিদায় নিয়ে কষ্ট কিংবা বাস্তবতাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।এটিই আমাদের প্রকৃতি বন্ধু। যা আমাদের ভেঙ্গে গড়ে তোলে। জীবন মানে হলো যাত্রাপথ। ছুটে চলার পথে মাঝে মাঝে থামতে হয়।আত্নউপলব্ধি করার জন্য। অর্থাৎ কোন জায়গায় থেকে সময় এলো বিদায় নেবার আর কোথায় যুক্ত হলে নিজেকে সম্বৃদ্ধ করতে পারবে এই বিষয় টা বোঝা জরুরি। যেকোন বিদায় কষ্টের হয় তারপরও এটাও জরুরি কারন সময় ফুরিয়ে গেলে, জীবনের গতিপথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। পিছুটান এড়িয়ে যোজন যোজন দূর, সপ্নের সীমানার কাছাকাছি যেতে। সত্যিকার অর্থে বিষয় টি অর্থবহন করবে।
বিদায় বলতে আমরা ভিন্ন কিছু দৃষ্টি ভঙ্গিও রাখতে পারি। শুধু ভালো সময় নিয়েই জীবন পার হয় না,খারাপ সময় নিয়েও পার হয়। আবার চক্র আকারে পরিবর্তন হয়। যার জন্য কোন কিছুই আমাদের জিবনে স্থায়ীভাবে থাকতে পারে না।
উদাহরণ দেওয়া যায়, জীবনে ক্ষেত্রে কেউ কেউ অফিসে নিজের ট্যালেন্টের জোরে প্রোমোশন পায়,কেউ বা আমেরিকাতে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করে,লাইফ ইভেন্ট দিয়ে থাকে,আবার কেউ বা চাকরি নামক সোনার হরিণের খোঁজে বছরের পর বছর অপেক্ষা করে চরম হতাশা নিয়ে দিন পার করছে।
তবে এই সব কিছুি ক্ষণিকের জন্য। কারণ প্রকৃতির নিয়মেই সুন্দর, কঠিন, যন্রনার সকল কিছুই পরিবর্তন হবেই। বিদায় নিয়ে নিবে। তার জন্যই আশায় বাঁচি আমরা।কারণ এই “আশা” ই মানুষকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয় বলে আমি মনে করি।
বিদায় বেলা যেকোন পরিস্থিতিতেই আসবে,যেকোন ক্ষেত্রেই আসবে তাই অন্যর সাথে নিজের তুলনা দেওয়া ঠিক হবে না। অন্যর কথা, অবস্থান নিয়ে ভাবলে ছাড়া আর কিছুই হবে না।
তাই হতাশা, চিন্তা এগুলোকেও বিদায় দিতে হয়। ভাগ্য, মেধা,স্কীল, পরিশ্রম, নিয়তি এতো এতো ভ্যারিয়েবল নিয়ে জীবনের সমীকরণ মেলানে যায় না। বিদায় কে ইতিবাচকভাবে নিলে, দুশ্চিন্তা কে বিদায় দেওয়া উচিৎ
অন্যভাবে বলা যায়,ভালো থাকার সীমানা নেই। যার থাকার জায়গা নেই তার ঘর চাই,গাড়িতে চলা মানুষটা বিমানে চড়ার স্বপ্ন দেখে। ভালোথাকার জীবনযুদ্ধটা বিদায় নামক বার্তায় সবসময় ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরে।
একটা অসীম দৌড় প্রতিযোগীতা যার কোন ফিনিশিং লাইন নেই।মনে রাখতে হবে,মূল্যবোধ নিয়ে কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, শুধুই এগিয়ে যাওয়া। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শেষ করা।
জীবনের গল্পের অধ্যায় শেষ হবেই,কিন্তু শেষ টা যেন সুন্দর হয়। সুখ অনুভব করতে গেলে বিদায় দিতেই হবে অনেক অনেক বছর,সময়,মুহূর্তকে দৃঢ় সংকল্পের সাথে।
বিদায় অনুষ্ঠানের ছন্দ ও কবিতা
- জীবনের অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাটিয়েছি,শিক্ষাঅঙ্গনে।সময় পার করেছি বন্ধুূের সাথে। এই “বিদায়” বেলা,ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি,কোন কথা,কাজে কষ্ট পেলে মনে গেঁথে রেখো না। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রেখো।পাশাপাশি দোয়া কইরো। আবার দেখা হবে।
- “বিদায়” যেমন দিতে ইচ্ছে হয় না,তেমনি দিতেও মন চায় না।কিন্তু নিষ্ঠুর প্রকৃতির প্রথা উপেক্ষা করার সাধ্য নাই। বিদায় বেলা আবদার রইলো বন্ধু প্রতি, দোয়ায়,মোনাজাতে স্মৃতিতে মনে রেখো। পরোকালে যেন আবার দেখা হয়।
- “বিদায়ের চিন্তা মনে হইলে বন্ধু হৃদয়ে যন্ত্রণা হয়।আবেগের পাহাড় তৈরি হয় মনে। কিন্তুু লক্ষ্যে অর্জনের যাত্রায় তোমার জন্য রইলো শুভকামনা।
বিদায় বন্ধু বিদায়…
কালের বির্বতনে সুন্দর সম্পর্ক গুলোর সুতা ছিঁড়তে হয়। শিক্ষক, পরিবার, বন্ধু সকলের ভালবাসা সাথে নিয়ে, জীবনের তাগিদে নতুন গন্তব্যে পারি দেওয়া বন্ধু, বিদায়ের শেষ সময়ে, ভালবাসা দিয়ে তোমাকে বিদায় জানাচ্ছি।
আমাদের হৃদয় আজ দুঃখ ব্যাথায় ভরে উঠেছে। অমুল্য সাহচর্যলাভে ধন্য হয়েছে মন। কিন্তু তোমার জীবনের জ্ঞানের পরিসীমা আরও প্রসারিত করতে এই বিদায় ভারাক্রান্ত মনেই দিতে হচ্ছে।
বন্ধু তোমার অনুপস্থিতি মনকে বড়োই কষ্ট দিবে।মায়া বিষয়টাই এমন। বিদায়ের শেষ বেলা সেই মায়াবী মুহূর্ত গুলো বার বার মনে পরছে। আর একসাথে সময়,মজা,আড্ডা দেওয়া হবে না।
শেষ বেলায় বলছি বন্ধু, যেখানেই থাকো অনেক ভালো থেকো।দোয়া রইলো তোমার জন্য।
বিদায় অনুষ্ঠানের কবিতা
আলোর স্মরণ পথ একাচলে,
কতশত ভুল, অভিমান, শিক্ষা নিয়ে,
একাই পথ পাড়ি দেওয়া।
তীব্র সেই আলোর মাঝে,
জীবনের গতিপথ খুঁজে পাওয়া।
মায়ার বাঁধন ছিড়ে,
ফিরে যাও স্বপ্ন নিড়ে,
জমে থাকা নিয়ন স্বপ্ন গুলোকে
বেধে ফেলো হিসেবের নেশায়।
সপ্ন দেখা ভুল নয়!!!
বুকে সাহস রেখে বন্ধু
তুমি এগিয়ে যাও,
তুমি দেখিয়ে দাও
বাধার দেওয়াল তুমি
ভাঙতে পার।
সাফল্য আসবেই।
সকল বিষয়ের নির্দেশিকা পেতে ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন কোনো সমস্যা হলে আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজ ইনবক্স করুন।
প্রিয় শিক্ষার্থিরা অন্যান্য সকল বিষয়ের সাজেশন পেতে আমাদের YOUTUBE চ্যানেল দ্রুত Subscribe করো।
ইতিমধ্যে সকল বিষয় নিয়ে সাজেশন দেওয়া হয়েছে। আরো নতুন কিছু আপডেট পেতে চোখ রাখুন (ERIN) ধন্যবাদ।