অভাব কাকে বলে ? অভাব হলো প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি বা অপর্যাপ্ততা। এটি কোনো বস্তু, সম্পদ, অর্থ, সুযোগ, বা মানসিক চাহিদার কমতি হতে পারে, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বা সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, অভাব সাধারণত দরিদ্রতা বা মৌলিক প্রয়োজনীয়তার অভাবে ইঙ্গিত করে, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, বা শিক্ষা। অর্থনীতি তে অভাব এমন একটি মৌলিক সত্যকে বোঝায় যে পৃথিবীতে সীমিত পরিমাণে মানব ও অ-মানব সম্পদ বিদ্যমান, যা সর্বোত্তম প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিটি অর্থনৈতিক পণ্যের নির্দিষ্ট সীমিত পরিমাণে উৎপাদন সম্ভব। যদি অভাবের পরিস্থিতি না থাকত এবং অসীম পরিমাণে প্রতিটি পণ্য উৎপাদন করা যেত, তাহলে কোনো অর্থনৈতিক পণ্য থাকত না যা তুলনামূলক ভাবে দুর্লভ বলে বিবেচিত হয়।
অভাব একটি পণ্যের সীমিত প্রাপ্যতাকে নির্দেশ করে যার প্রতি বাজারে বা সাধারণ জনগণের চাহিদা থাকতে পারে। এটি কেবল মাত্র পণ্যের স্বল্পতাই নয় বরং একজন ব্যক্তির সেই পণ্য ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবকেও বোঝায়। অভাবের বিপরীত হলো প্রাচুর্য, যেখানে পণ্য বা সম্পদের সরবরাহ মানুষের তুলনায় পর্যাপ্ত বা অতিরিক্ত পরিমাণ বিদ্যমান থাকে। অর্থনৈতিক তত্ত্বে অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব বহন করে , কারণ এটি সম্পদ বন্টন, উৎপাদন এবং ভোগের সিদ্ধান্ত গুলোকে প্রভাবিত করে।
অভাবের প্রামাণ্য সংজ্ঞা
১. লর্ড রবিনস: “অভাব হলো সেই পরিস্থিতি, যেখানে মানুষের অসীম চাহিদা মেটানোর জন্য সম্পদ সসীম এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য।” (“Scarcity is the situation where human wants are unlimited, but resources are limited and have alternative uses.”)
২. পল স্যামুয়েলসন : “ অভাব হলো এমন অবস্থা, যেখানে মানুষ যা চায় তার তুলনায় প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের প্রাপ্যতা কম।”( Scarcity is the situation in which resources are limited in supply compared to the wants for them”)
আরো পড়ুন :
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি?
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য ছন্দ ও কবিতা
অভাবের বৈশিষ্ট্য
১. সীমাবদ্ধতা : অভাবের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি সম্পদের সীমিত প্রাপ্যতাকে নির্দেশ করে। পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ, যমন: প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, পুঁজি এবং প্রযুক্তি,সীমিত পরিমাণে বিদ্যমান , যা মানুষের অসীম চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
২. অভাব অসীম : মানুষের অভাবের শেষ নেই, কেউই তার জীবনের সব অভাব পূরণ করতে পারে না। একটি অভাব পূরণ হতেই নতুন অভাবের সৃষ্টি হয়। এজন্য অভাবের গুরুত্ব অনুসারে সমাধনের কাজে মনোনিবেশ করতে হয়।
৩. বিকল্প ব্যবহার : অধিকাংশ সম্পদই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। উদাহারনসরূপ- জমি কৃষি, আবাসন বা শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
৪. অভাব পরস্পরের ব্যবহার : কিছু অভাব পূরণের জন্য একাধিক দ্রব্যের প্রয়োজন হয়। যেমন : গাড়ি চালানোর জন্য পেট্রোলের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোনো একক দ্রব্য দ্বারা অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়।
৫. পছন্দ ও অগ্রাধিকার : অভাবের কারণে মানুষকে তাদের চাহিদা গুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার স্থাপন করতে হয়। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো প্রথমে মেটানোর চেষ্টা করে এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা গুলো পরবর্তীতে রাখে।
৬. অনুকরণ ভিত্তিক অভাব : মানুষের অনুকরণ প্রবণতা থেকেও অনেক অভাবের সৃষ্টি হয়। যেমন – প্রতিবেশীর কাছে নতুন মডেলের মোবাইল দেখে নিজেকেও তা কেনার ইচ্ছা হতে পারে, যদিও সেটি বাস্তবে অতটা প্রয়োজনীয় না।
৭. মূল্য নির্ধারণ: যেহেতু অভাবের কারণে সম্পদ ও পণ্য সীমিত, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ হয়। মূল্য হলো সেই পরিমাণ অর্থ, যা একজন ব্যক্তি পণ্য বা সেবা পেতে দিতে রাজি থাকে।
৮. অর্থনৈতিক পণ্য সৃষ্টি : অভাবের কারণে পণ্য ও সেবা “অর্থনৈতিক পণ্য” হিসেবে বিবেচিত হয়, যেগুলোর চাহিদা আছে কিন্তু সরবরাহ কম।
উপসংহার : অভাব অর্থনীতির কেন্দ্রীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এটি মানুষকে পছন্দ, অগ্রাধিকার এবং সংস্থান বন্ঠনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। মানুষের অসীম চাহিদা এবং সসীম সম্পদের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোই অর্থনীতির মূল লক্ষ্য। এজন্য অভাব এবং তার বৈশিষ্ট্য গুলো সঠিক ভাবে বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সকল বিষয়ের নির্দেশিকা পেতে ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন কোনো সমস্যা হলে আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজ ইনবক্স করুন।
প্রিয় শিক্ষার্থিরা অন্যান্য সকল বিষয়ের সাজেশন পেতে আমাদের YOUTUBE চ্যানেল দ্রুত Subscribe করো।
ইতিমধ্যে সকল বিষয় নিয়ে সাজেশন দেওয়া হয়েছে। আরো নতুন কিছু আপডেট পেতে চোখ রাখুন (ERIN) ধন্যবাদ।