সাধারণভাবে সম্পদ বলতে টাকা-পয়সা, ধনসম্পত্তি ও ভোগ্য সামগ্রীকে বোঝায়। তবে অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পদ বলতে এমন সকল দ্রব্য বা বস্তু বোঝায়, যার উপযোগ আছে, যা সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়, যা হস্তান্তরযোগ্য, এবং যার বাহ্যিক অস্তিত্ব রয়েছে।
অর্থাৎ, যেয়ব বস্তু মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে, বাজারে যার চাহিদা রয়েছে এবং যা লেনদেনযোগ্য, তাই সম্পদ। উদাহরণস্বরূপ: জমি, ভূমি, স্বর্ণ, বাড়ি,টাকা, ব্যবসায়ের সুনাম ইত্যাদি সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। তবে বাতাস, সূর্যের আলো বা নদীর পানি সম্পদ নয়, কারণ এগুলোর যোগান সীমাহীন এবং বিনিময়মূল্য নেই।
আরো পড়ুন : সামষ্টিক অর্থনীতি মৌলিক ধারণা
সম্পদের প্রকারভেদ
অর্থনীতিতে সম্পদকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়। তবে সাধারণত সম্পদকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা –
১. প্রকৃতির ভিত্তিতে সম্পদের প্রকারভেদ :
(ক) প্রাকৃতিক সম্পদ
যেসব সম্পদ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত যা মানুষ নিজে সৃষ্টি করতে পারে না, সেগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ। যেমন : খনিজ সম্পদ, নদী, বন,বাতাস,সূর্যের আলো,জলবায়ু ইত্যাদি।
(খ) মানব সম্পদ
যে সম্পদ মানুষের শ্রম,দক্ষতা বা মেধার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়, তাকে মানব সম্পদ বলে। যেমন: ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার,কৃষক,প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ইত্যাদি।
২. বিনিময়যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্পদের প্রকারভেদ
(ক) বাস্তব সম্পদ
যেসব সম্পদের ভৌত ও দৃশ্যমান অস্তিত্ব রয়েছে, সেগুলো বাস্তব সম্পদ। যেমন- জমি,গাড়ি,শোনা,গবাদিপশু ইত্যাদি।
(খ) অবাস্তব সম্পদ
যে সম্পদের বাহ্যিক অস্তিত্ব নেই কিন্তু আর্থিক মূল্য আছে তাকেই অবাস্তব সম্পদ বলে। যেমন – সুনাম,কপিরাইট, ট্রেডমার্ক , ব্র্যান্ড ভ্যালু ইত্যাদি।
৩. ব্যবহারযোগ্যতার ভিত্তিতে সম্পদের প্রকারভেদ
(ক) ভোগ্য সম্পদ
যেসব সম্পদ মানুষ সরাসরি ব্যবহার করতে পারে, তাকেই ভোগ্য সম্পদ বলে। যেমন- খাদ্য, পোশাক, বই, আসবাবপত্র ইত্যাদি।
(খ) উৎপাদন মূলক সম্পদ
যেসব সম্পদ দিয়ে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করা যায়, সেগুলো উৎপাদন সম্পদ। যেমন – কলকারখানা, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, শ্রমশক্তি ইত্যাদি।
৪. মালিকানার ভিত্তিতে সম্পদের প্রকারভেদ
(ক) ব্যক্তিগত সম্পদ
যেসব সম্পদ কোনো ব্যক্তি বা মালিকানায় রাখে,সেগুলো ব্যক্তিগত সম্পদ। যেমন- ব্যক্তির বাড়ি,গাড়ি, টাকা, জমি ইত্যাদি।
(খ) সরকারি সম্পদ
যেসব সম্পদ সরকার বা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে এবং জনগণের জন্য ব্যবহৃত হয় সেগুলো সরকারি সম্পদ। যেমন- রাস্তা, সেতু,সরকারি হাসপাতাল, রেল, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি।
সম্পদের বৈশিষ্ট্য সমূহ : সকল কিছু কেই সম্পদ বলা যায় না। তাই অর্থনীতির দিক থেকে সম্পদের প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে।
১.উপযোগ
উপযোগ সম্পদের মূল বৈশিষ্ট্য। কোনো দ্রব্য বা সেবা মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারলেই তা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি কোনো জিনিস মানুষের উপকারে না আসে, তবে সেটি সম্পদ নয়।
উদাহরণ : খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান ইত্যাদি মানুষের প্রয়োজন মেটায়, তাই এগুলো সম্পদ।কিন্তু মরভূমির বালির নির্দিষ্ট কোনো উপযোগ নেই, তাই এটি সম্পদ নয়।
২. দুষ্প্রাপ্যতা বা স্বল্পতা
যদি কোনো দ্রব্য সীমাহীন পরিমাণে পাওয়া যায়, তবে সেটি সম্পদ নয়। সম্পদ হতে হলে সেটির যোগান সীমিত থাকতে হবে।
উদাহরণ : বাতাস ও সূর্যের আলো মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও এগুলো সহজলভ্য ও সীমাহীন, তাই সম্পদ না। কিন্তু স্বর্ণ, জমি,তেল ইত্যাদির যোগান সীমিত, তাই এগুলো সম্পদ।
৩. হস্তান্তরযোগ্যতা
সম্পদ হতে হলে সেটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে স্থানান্তর যোগ্য হতে হবে। যদি কোনো দ্রব্য বা সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করা না যায়, তবে সেটিকে সম্পদ বলা যাবে না।
উদাহরণ : জমি,টাকা, গাড়ি ইত্যাদি হস্তান্তর যোগ্য সম্পদ । কিন্তু একজন শিল্পীর প্রতিভা বা জ্ঞান হস্তান্তর যোগ্য নয়, তাই তা অর্থনৈতিক সম্পদ নয়।
৪. বাহ্যিকতা
সম্পদ হতে হলে সেটির বাহ্যিক বা দৃশ্যমান অস্তিত্ব থাকতে হবে। যদি কোনো কিছু কেবল মানসিক বা অভ্যন্তরীন হয়, তবে তা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
উদাহরণ : টাকা,বাড়ি,গাড়ি ইত্যাদির বাহ্যিক অস্তিত্ব রয়েছে, তাই এগুলো সম্পদ। কিন্তু মায়ের ভালোবাসা, একজন গায়কের কন্ঠ স্বর বা কারো জ্ঞান বাহ্যিক নয়,তাই তা সম্পদ নয়।
উপসংহার : কোনো সম্দকে সম্পদ হিসেবে গন্য করতে হলে উপযোগ,দুষ্প্রাপ্যতা, হস্তান্তরযোগ্যতা এবং বাহ্যিকতা থাকতে হবে। এই চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। যদি এই চারটি বৈশিষ্ট্যের একটি অনুপস্থিত থাকে তাহলে সেটি কে অর্থনৈতিক সম্পদ বলা যাবে না। এক কথায় বলা যায় সম্পদ হতে হলে উপরের চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। অর্থনীতি তে সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি ব্যাক্তিগত,সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তাই সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
FAQ প্রশ্ন ও উত্তর
১. সম্পদ কী?
উত্তর : সম্পদ বলতে টাকা-পয়সা, ধনসম্পত্তি ও ভোগ্য সামগ্রীকে বোঝায়। তবে অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পদ বলতে এমন সকল দ্রব্য বা বস্তু বোঝায়, যার উপযোগ আছে, যা সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়, যা হস্তান্তরযোগ্য, এবং যার বাহ্যিক অস্তিত্ব রয়েছে।
২. সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী কী?
উত্তর :
ক. উপযোগ,
খ.দুষ্প্রাপ্যতা,
গ. হস্তান্তরযোগ্যতা এবং
ঘ. বাহ্যিকতা থাকতে
৩. অর্থনীতি তে সম্পদের গুরুত্ব কী?
উত্তর : সম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি। এটি ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
৪. কোনগুলো সম্পদ নয়?
উত্তর: যেসব বস্তু সীমা বিনিময়যোগ্য নয়, সেগু সূর্যের আলো, মায়ের ভালোবাসা ইত্যাদি।